এক পায়ে দাঁড়ানো সুস্থ বার্ধক্যের চাবিকাঠি: ভারসাম্য উন্নত করার জন্য ৮টি ব্যায়াম
এক পায়ে দাঁড়ানো বেশ সহজ কাজ বলে মনে হতে পারে। তবে, যারা কখনও দাঁড়ানোর সময় নড়াচড়া করেছেন বা যোগব্যায়ামের ট্রি পোজ করার সময় হোঁচট খেয়েছেন, তারা জানেন এটি আসলে কেমন কঠিন হতে পারে। বয়সের সাথে সাথে এটি আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, ক্রমবর্ধমান গবেষণা দেখায় যে এক পায়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা এবং কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন, তা স্বাস্থ্যকর বার্ধক্যের একটি সূচক হতে পারে।
রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনর্বাসন এবং নড়াচড়া বিজ্ঞানের সহ-সভাপতি ন্যান্সি আর. কির্শ বলেছেন, “এক পায়ে দাঁড়ানো ভালো ভারসাম্যের একটি সূচক। খারাপ ভারসাম্য স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সংকেত হতে পারে।”
**এক পায়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে কী বলে:**
একটি নতুন গবেষণায়, ৫০ বছরের বেশি বয়স্ক সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের বিভিন্ন ব্যায়াম করতে বলা হয়েছিল, যার মধ্যে ছিল ভারসাম্য, গ্রিপ শক্তি এবং হাঁটুর শক্তি পরিমাপের জন্য ডিজাইন করা ব্যায়াম। অংশগ্রহণকারীদের এক পায়ে দাঁড়ানোর পাশাপাশি দুই পায়ে চোখ খোলা ও বন্ধ অবস্থায় দাঁড়াতে বলা হয়েছিল, প্রতিটি ব্যায়াম ৩০ সেকেন্ড ধরে করানো হয়। গবেষণায় দেখা যায়, বয়স বাড়ার সাথে সাথে এক পায়ে দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা কমে যায়। গবেষকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, এটি নার্ভাস সিস্টেমের বার্ধক্য মাপার একটি নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি।
**এক পায়ে দাঁড়ানো কেন দীর্ঘায়ু এবং সুস্থ বার্ধক্যের সাথে সম্পর্কিত:**
এটি মূলত শরীরের ভারসাম্যের সাথে সম্পর্কিত। মায়ো ক্লিনিকের গবেষক কেন্টন আর. কাউফম্যান বলেন, “ভাল ভারসাম্য দৈনন্দিন জীবনের কাজগুলো করার ক্ষমতা দেয়। এই ক্ষমতা থাকলে আপনি ভালো মানের জীবনযাপন করতে পারবেন, যা স্বাস্থ্যকর বার্ধক্য নির্দেশ করে।”
কিছু শারীরিক লক্ষণ যেমন গ্রিপ শক্তি এবং হাঁটার গতি ইত্যাদিও বার্ধক্যের সাথে সম্পর্কিত। তাই, ব্যায়াম করে ভারসাম্য বজায় রাখা এবং শরীরের সামগ্রিক ফিটনেসের ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত।
**ভারসাম্য উন্নত করার জন্য কিছু ব্যায়াম:**
1. **এক পায়ে দাঁড়ানো**: এক পায়ে দাঁড়িয়ে অন্য পা মাটি থেকে সামান্য উপরে রাখুন। ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে ধরে রাখুন, তারপর পা পরিবর্তন করুন।
2. **হিল-টু-টো ওয়াকিং**: এক পা অপর পায়ের সামনে রেখে সরু রেখায় হাঁটুন।
3. **হিপ অ্যাবডাকশনস**: পাশে দাঁড়িয়ে এক পা সোজা করে পাশের দিকে তুলুন এবং কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন।
4. **ক্লক রিচ**: এক পায়ে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে ঘড়ির বিভিন্ন অবস্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন।
বয়স অনুযায়ী এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা সময়ের লক্ষ্যমাত্রা:
- ৪০ বছরের কম: প্রায় ৪৫ সেকেন্ড
- ৪০-৪৯ বছর: প্রায় ৪০ সেকেন্ড
- ৫০-৫৯ বছর: প্রায় ৩৭ সেকেন্ড
- ৬০-৬৯ বছর: প্রায় ২৮ সেকেন্ড
- ৭০-৭৯ বছর: প্রায় ১৪-২০ সেকেন্ড
- ৮০ বছরের বেশি: প্রায় ৬-১০ সেকেন্ড
**এক পায়ে দাঁড়ানো সুস্থ বার্ধক্যের চাবিকাঠি**: ভারসাম্য উন্নত করার জন্য ৮টি ব্যায়াম
এক পায়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা আপনার শারীরিক ভারসাম্যের সূচক এবং বয়সের সাথে সুস্থ থাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এখানে আপনার ভারসাম্য উন্নত করতে সহায়ক ৮টি ব্যায়াম উল্লেখ করা হলো:
1. **এক পায়ে দাঁড়ানো (Single-Leg Stand)**
- এক পায়ে দাঁড়িয়ে অন্য পা মাটি থেকে সামান্য উপরে তুলে ধরুন।
- ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে এই অবস্থান ধরে রাখুন, তারপর অন্য পায়ে পরিবর্তন করুন।
- চোখ বন্ধ করে বা কুশন বা নরম জায়গায় দাঁড়িয়ে চ্যালেঞ্জ বাড়ান।
2. **ট্যান্ডেম ওয়াকিং (Tandem Walking)**
- এক পা অন্য পায়ের সামনে রেখে হাঁটুন, যেন আপনি দড়ির উপর হাঁটছেন।
- হাতগুলো প্রয়োজনে সামনের দিকে ছড়িয়ে ভারসাম্য রক্ষা করুন।
3. **হিপ অ্যাবডাকশন (Hip Abductions)**
- একটি চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে পা সোজা রেখে এক পা পাশের দিকে তুলুন।
- কয়েক সেকেন্ড ধরে রেখে ধীরে ধীরে পা নামিয়ে আনুন এবং অন্য পায়ে পুনরাবৃত্তি করুন।
4. **হিল-টু-টো রকিং (Heel-to-Toe Rocking)**
- পা দুইটি কাঁধ-প্রস্থে রেখে দাঁড়ান। পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে গোড়ালি তুলুন, তারপর ধীরে ধীরে পায়ের আঙুল নামিয়ে গোড়ালিতে ভর দিন।
5. **স্ট্যান্ডিং মার্চ (Standing March)**
- সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং জায়গায় থেকে হাঁটুন, হাঁটু যতটা সম্ভব উপরে তুলুন।
- শরীরকে সোজা রেখে এই ব্যায়ামটি করুন।
6. **তাই চি (Tai Chi)**
- শরীরের বিভিন্ন অংশকে মসৃণ এবং ধীরগতিতে নাড়াচাড়া করার জন্য তাই চি এর ফর্মগুলি ব্যবহার করুন। এটি শিথিলতাও প্রদান করবে এবং ভারসাম্যও উন্নত করবে।
7. **ঘড়ির কাঁটা পৌঁছানো (Clock Reach)**
- কল্পনা করুন আপনি একটি ঘড়ির কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে আছেন। এক পায়ে দাঁড়িয়ে বিপরীত হাত দিয়ে "৩টা," "৬টা," এবং "৯টা" অবস্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন, ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করুন।
8. **ব্যালেন্স বোর্ড (Balance Board)**
- ব্যালেন্স বোর্ড বা বোসু বল ব্যবহার করে দাঁড়ানোর সময় ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করুন। সোজা দাঁড়ানো বা স্কোয়াট করার সময় এটি ব্যবহার করুন।
**ভারসাম্য ধরে রাখার সময় লক্ষ্য:
- ৪০ বছরের কম বয়সীরা ৪৫ সেকেন্ডের জন্য ভারসাম্য ধরে রাখতে চেষ্টা করুন।
- ৪০-৪৯ বছরের মধ্যে ৪০ সেকেন্ড, ৫০-৫৯ বছরের জন্য ৩৭ সেকেন্ড।
- ৬০-৬৯ বছরের জন্য ২৮ সেকেন্ড এবং ৭০-৭৯ বছরের জন্য ১৪-২০ সেকেন্ড।
- ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য লক্ষ্য ৬-১০ সেকেন্ড।
এই ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করলে শরীরের শক্তি, সমন্বয় এবং মাংসপেশির স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পাবে, যা সুস্থ বার্ধক্যের জন্য অপরিহার্য।
**একটি গাইড: বয়সের সাথে শরীরকে চ্যালেঞ্জ জানানো**
বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরকে সুস্থ রাখতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
1. **ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ানোর জন্য স্ট্রেচিং শুরু করুন**: ফ্লেক্সিবিলিটি বা নমনীয়তা বার্ধক্যের সাথে ভালোভাবে যুক্ত। প্রতিদিন কিছু স্ট্রেচিং ব্যায়াম শুরু করুন।
2. **একটানা বসে থাকা বা দাঁড়ানো এড়িয়ে চলুন**: দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা যেমন ক্ষতিকর, তেমনি একটানা দাঁড়ানোও ক্ষতিকর। শরীরকে সক্রিয় রাখতে মাঝে মাঝে নড়াচড়া করা গুরুত্বপূর্ণ।
3. **ব্যালেন্স বোর্ডের অভিজ্ঞতা**: ব্যালেন্স বোর্ড ব্যবহার করে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার চর্চা করুন। এটি শরীরের স্থিতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
4. **প্রতিরোধমূলক ব্যায়ামের গুরুত্ব**: বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীর ফিট রাখতে প্রতিরোধমূলক ব্যায়াম অপরিহার্য। ব্যায়াম করতে ওজন তুলতে হবে না; হালকা ব্যায়ামেই যথেষ্ট ফিট থাকা যায়।
5. **কতটুকু ব্যায়াম দরকার?**: শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে প্রতিদিন কতটুকু ব্যায়াম করা উচিত, তা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী মেনে চলা উচিত।
6. **পুশ-আপের মাধ্যমে পরিবর্তন**: পুশ-আপ আপনার শরীরের শক্তি বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। সঠিকভাবে পুশ-আপ করার কৌশল শিখুন।
7. **হাঁটা উন্নত করার উপায়**: নতুন ধরনের পথ বা টেরেইনে হাঁটার মাধ্যমে আপনার গেইট বা হাঁটার ধরন উন্নত করুন।
8. **ব্যালেন্স বাড়াতে হাঁটা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল**: পিছনে হাঁটা এবং বিকল্প-নাসারন্ধ্র শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল আপনার ভারসাম্য উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে।
9. **প্রতিরোধমূলক ব্যায়াম নিরাপদে করা**: ফিটনেস প্রশিক্ষকদের কাছ থেকে সঠিক পরামর্শ নিয়ে নিরাপদে প্রতিরোধমূলক ব্যায়াম করুন।
10. **ব্যায়াম করার সঠিক সময়**: বিশেষজ্ঞদের মতে, সকাল, বিকাল বা সন্ধ্যায় কোন সময় ব্যায়াম করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় তা নির্ভর করে আপনার দৈনন্দিন অভ্যাসের ওপর।
11. **বিছানায় যাওয়ার আগে ব্যায়াম করলে কী প্রভাব পড়ে?**: রাতে ব্যায়াম করলে এটি আপনার ঘুমের উপর কেমন প্রভাব ফেলে তা জানতে হবে।
12. **ওজন তুললে মাংসপেশি বাড়বে না**: ওজন তোলার সঙ্গে সম্পর্কিত ভুল ধারণাগুলি দূর করুন। ওজন তোলা আপনার মাংসপেশি বাড়ানোর চেয়ে শক্তিশালী করবে।
13. **ব্যায়ামের বিভিন্ন উপকারিতা**: নিয়মিত ব্যায়াম করার আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে যা আপনার শরীর ও মনকে সুস্থ রাখবে।
14. **কর্মক্ষেত্রে কম বসে থাকার জন্য অভ্যাস**: কাজের সময় বেশি সময় বসে না থেকে কিছু অভ্যাস গড়ে তুলুন, যা আপনাকে সক্রিয় রাখবে।
15. **ব্যায়ামের জন্য অনুপ্রেরণা**: ব্যায়ামে মনোযোগ ধরে রাখতে বিশেষজ্ঞ
দের কিছু কার্যকর পরামর্শ নিন।
0 Comments